১৯৮১ সালে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজা পড়ে এসে বেশকিছু দিন যাওয়ার পর জব্বার ভাই’র মাধ্যমে বুলবুল ভাই’র সঙ্গে পরিচয় হয়।
পরিচয় হওয়ার পরে তৎকালীন সময়ের জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক খঃ বাবুল চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক মনিরুজ্জামান বুলবুল, আমিনুল হক তালুকদার ঝুনু, আবুল কালাম মোস্তফা লাবু, সেসময়কর সদর থানা ছাত্রদলের সভাপতি আঃ জব্বার, (বর্তমানে অসুস্হ) সাধারণ সম্পাদক প্রদিপ সাহা, ছাত্র নেতা চিত্তরঞ্জন দাস নুপুর, রকিব উদ্দিন বাবুল, অমল ব্যানার্জি, ওনাদের সঙ্গে আমি সর্বক্ষন ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করার কাজে পাড়া মহল্লায় ঘুরে বেড়াতাম। বিকেলে ছেলেরা মাঠে খেলতো আমরা বসে থাকতাম খেলা শেষে ছেলেদের সাথে কথা বলতাম। ওদেরকে বলতাম আমরা তোমাদের সাথে একটু কথা বলতে চাই আগামী কাল আমাদের একটু সময় দাও ওরা আমাদের সময় দিতো, আমরা শহিদ জিয়ার আদর্শের কথা তুলে ধরে ছাত্রদের উদ্ভুদ্ধ করতাম, পর্যায়ক্রমে ছাত্রদলের আঞ্চলিক কমিটি গঠন করতাম।
এই ভাবে পর্যায়ক্রমে থানা ও পৌর কমিটি গঠন করে জেলা ছাত্রদলের সম্মেলন হলো, সে সম্মেলনে বুলবুল ভাই সভাপতি চিত্তরঞ্জন দাস নুপুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলো।
শুরু হলো স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, ধীরে ধীরে আন্দোলন তীব্র হওয়া শুরু করলো।
১৯৮৬ সালে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ (কাগমারী কলেজ) নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল হামিদ-বিদুৎ পরিষদকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ধাওয়া দিয়ে বের করে দেওয়ার সংবাদ শুনে আমার সাথে থাকা ৩০/৩৫ জন সাহসী কর্মি বাহিনী নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করে শক্ত অবস্হান নেওয়ার পর শতশত ছাত্র ছাত্রী আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিল বলে সে কারণে ছাত্রদলের উপর আর কেও কোনদিন আঘাত করার চিন্তা করেনি। আমার এই ভুমিকাকে স্বাগত জানানোর জন্য বুলবুল ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে উৎসাহ যুগিয়ে ছিলেন। সেকথা এখনও মনে পড়ে।
বুলবুল ভাই সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে দুইবার ছাত্রদলের প্যানেলে বুলবুল-মিজান পরিষদ এবং বুলবুল বাবুল পরিষদে ভিপি নির্বাচন করেছেন, প্রথম বার আমি এবং ছাত্রনেতা রকিব উদ্দিন বাবুল সহ আমরা প্রচুর পরিশ্রম করেছিলাম ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট আদায়ের জন্য। দ্বিতীয় বার আমি এবং ছাত্রনেতা লাল মাহমুদ সহ আমরা রাত দিন প্রচুর পরিশ্রম করেছিলাম ভোটারদের মন জয় করে বুলবুল ভাইকে নির্বাচিত করার জন্য। কিন্তু না পারিনি অদৃশ্য শক্তির বাঁধার কারণে বুলবুল ভাইকে নির্বাচিত করতে পারিনি। সেকারণে ছাত্র ছাত্রীরা অনেক কান্না কাটিও করেছিলো।
সবগুলো আঞ্চলিক কমিটি গঠনের শেষে ১৯৮৯ সালে থানা এবং শহর শাখার সম্মেলনে আমি সদর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়ে একটি মিছিল ভাসানী হলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে মেইন রোডে ম্যাটানিটির সামনে যাওয়া মাত্রই আমার মিছিলের উপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালায়, সেখানে আমি সহ আমার সাথে থাকা অসংখ্য কর্মি আহত হয়।
আমি চিকিৎসা নিয়ে আবার কয়েক ঘন্টা পরে ভাসানী হলে পৌছাই সেখানে সব বক্তারা আমার পক্ষে বক্তব্য রাখেন এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানায়। এবং সেইদিন দিবাগত রাতেই বুলবুল ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে শান্তনা এবং সাহসী পরামর্শ দেন এবং টুটুল ভাই আমাকে আমার উপর সন্ত্রাসী হামলার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার জন্য সার্কিক সহযোগীতার আশ্বাস দেন। আমি সেদিন উৎসাহ নিয়ে আশ্বস্ত হয়ে সেদিনই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের জবাব দিয়েছিলাম। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন মামলা হামলা -পাল্টা হামলা মামলার শিকার হতে হয়েছে, মাঠ ছাড়িনি – বুলবুল ভাই অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন নিরঅলশ ভাবে।
সম্মেলনের দিন সদর থানার সভাপতি এবং শহর শাখার সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণা হলেও সদর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজন আগ্রহী প্রার্থী থাকার কারণে আমার নাম ঘোষণা হলোনা। পরবর্তিতে একটি নির্বাচনের ডেট ঘোষনা করে নির্বাচন হলো সেখানে আমি সদর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলাম। ধীরে ধীরে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে উঠা শুরু হলো, এক পর্যায়ে ডাকসুর ভিপি আমানউল্লা আমান ভাই হলেন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের সারা বাংলাদেশের আহবায়ক, প্রতি জেলায় ছাত্র ঐক্যের আহবায়ক কমিটি হলো, টাঙ্গাইল জেলার আহবায়ক বানালো হলো বুলবুল ভাইকে আর আমি এবং ছাত্রলীগ সহ অন্য ছাত্র সংগঠনের সবাইকে সদস্য করা হলো।
১৯৯০ সালে বিন্দুবাসিনী স্কুল ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আহবানে বিশাল ছাত্র গণজমায়েতে সভাপতিত্ব করলেন বুলবুল ভাই আর প্রধান অতিথি আমান ভাই। মিটিং শেষে আমান ভাই গেলেন বুলবুল ভাই’র বাসায় সেখানে বুলবুল ভাই’র আম্মার পায়ে ছালাম করে আমান ভাই বলেছিলেন খালাম্মা আমিও আপনার সন্তান বুলবুল আমার ভাই আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলনে আছি আমরা স্বৈরাচারকে হটাবোই আমরা সফল হবোই।
শুরু হলো অগ্নিঝরা আন্দোলন অসংখ্য মামলা হলো আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। বুলবুল ভাই’র নেতৃত্বে আত্নগোপনের পাশাপাশি মিটিং মিছিল চলছে,
আমাদের মনিটরিং করতেন সেসময়কর জেলা বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক মোহন(তিনি বর্তমানে অসুস্থ) সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম পিন্টু (১৪ বছর হয়ে গেলো তিনি একটি ষড়যন্ত্রমুলক মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক রয়েছেন)
আজকে আমাদের অনেক নেতা-কর্মি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে, অনেক নেতা কর্মি অসুস্থ রয়েছেন, অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী টাঙ্গাইল জেলা মৎস্যজীবী দলের প্রথম কমিটির সভাপতি আমার বড় ভাই হাফেজ মোঃ ইসমাইল হোসেন ১/১১ সরকার আমলে আর্মিরা আমাকে না পেয়ে ওনাকে ধরে নিয়ে বেদম প্রহার করে মৃত্যু পথযাত্রী করে ফেলে রেখেছিলো। তখন থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন তিনি গত ৬/৭ মাস আগে ব্রেন স্ট্রোক করে ছিলেন সেকারণে প্যাড়ালাইসিস হয়ে এখন অচল হয়ে গিয়েছেন।উনি এখন আর চলাফেরা করতে পারেননা। সবার কাছে উনার জন্য ও যারা বেচে আছেন এবং যারা মুরদেগান হয়েছেন তাদের জন্য দোয়া চাই।
ছাত্র রাজনীতি সহ বুলবুল ভাই যতদিন রাজনীতি করেছেন ততদিন ধরেই বুলবুল ভাই’র সঙ্গে সহযোদ্ধা হিসাবে কাজ করতে গিয়ে কত যে স্মৃতিতে জরিয়ে আছি সেগুলো বলে বা লিখে শেষ করতে পারবোনা। বুলবুল ভাই গ্রামের মেঠো পথ, রাজপথের পিচঢালা পথ, ঢাকার রাজপথ, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে অসংখ্যবার সাক্ষাৎ। ম্যাডামের সঙ্গে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা জনাব তারেক রহমান সাহেবের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার সঙ্গি ছিলাম। কোনদিন হতাশ হতে দেখিনি তবে বিভিন্ন সময় সমালোচনা করলেও বেলা শেষে বলতেন পাহেলী-বাংলাদেশে বিএনপিই সেরা দল,শহিদ জিয়া,খালেদা জিয়া,তারেক রহমান ব্যাতিত কিছু নেই, এই দল এবং এই নেতারাই জনগণের মনের মনিকুঠায় স্হান করে নিয়েছে।
বুলবুল ভাইকে ঢাকা নিয়ে গিয়েছে এই সংবাদ পাওয়া মাত্রই আমি তার নাম্বারে ফোন করে জিজ্ঞেস করি বুলবুল ভাই আপনি এখন কোথায় আছেন কেমন আছেন? উত্তরে বুলবুল ভাই বলেন আমি জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালে ভর্তি হইছি শরীরে জ্বর,সর্দি,কাশি, শরীরে ব্যাথা, আমি বল্লাম করোনা টেস্ট করিয়েছেন? বুলবুল ভাই বল্লেন টেস্টে দিছি রিপোর্ট পাইনি দেখা যাক কি হয়, মনে হয় করোনা হয়নি।
বুলবুল ভাইদের পরিবারের দায়িত্বশীলরা এখন তেমন কেউ’ই টাঙ্গাইল না থাকার কারণে সময়মত সঠিক খবর পাওয়া যায়নি। শেষের দিকে বুলবুল ভাই’র সঙ্গে বারবার কথা বলার চেষ্টা করেও আর খবর নিতে পারিনি। গতকাল প্রথম রোজার দিন জোহরের নামাজের পরে মসজিদে বসেই কোরআন শরীফ তেলোয়াত করে বাসায় এসেই দেখি আমার মোবাইল সেটে অসংখ্য ফোন কল এসে আছে, একই সময়ে এত ফোন কল কেনো – একটা ফোন কলের উত্তর দিতেই এই হৃদয় বিদারক মৃত্যুর সংবাদে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো, মনে হলো প্রেশার আপ-ডাউন করতেছিলো।
চুপকরে কিছু সময় বসে থাকতে না থাকতেই ফোনের পর ফোনে একই প্রসঙ্গে কথা বলতে হলো। এক পর্যায়ে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সাহেব ফোন করে তার শোকের কথা আমাকে জানালেন এবং বললেন বুলবুল ভাই’র পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং দলের পক্ষ থেকে শোকবার্তা রেডি হচ্ছে। এবং লক ডাউনের কারণে আমি হয়তো আসতে পারবোনা তুমি যেও।
কোনো এক সময় আমি টুটুল ভাই’র কাছথেকে জানাজার সময় এবং স্হান জেনে নিয়েছিলাম যথা সময় যথা স্হানে জানাজা ও কবর হয়েছে কবরে মাটি দিয়ে মহান
রাব্বুল আলামিনের নিকট দোয়া চেয়ে বাড়ী ফিরে ঘুমাতে পারিনি, বারবার মনে পরেছে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে অদ্যবধি কত স্মৃতি কত অভিজ্ঞতার কথা।
আর লিখতে পারছিনা শুধু এটুকুই বলবো কীর্তিমানের মৃত্যু নেই।
মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট প্রার্থনা তাহার জীবনের সকল গুনাহ্ মাফ করে তাহাকে জান্নাতের বাগিচা দান করিও। আমিন।।
প্রথমকণ্ঠ / এস এম জাকির হোসেন