১/১১ সরকার দ্বারা নির্যাতিত জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল টাঙ্গাইল জেলা শাখার প্রথম কমিটির সাবেক সভাপতি আমার বড় ভাই হাফেজ ইসমাইল হোসেন একবুক জ্বালা নিয়ে নিরবেই চলে গেলেন।
——————
তিনি ছিলেন একজন সহজ সরল বিনয়ী হাস্যজ্জ্বল মানুষ। ওনাকে খারাপ বলার মানুষ আমি কোনো দিন দেখিনি, তিনি ছিলেন আমার বড় আমরা পিঠাপিঠি দুই ভাই, তিনি বড় আমি ছোট আমরা এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছি ওনি সিনিয়র ব্যাচে আমি ওনার এক ব্যাচ জুনিয়র ছিলাম তবে দুজনে এক রুমে থাকতাম এক সঙ্গে খেলা ধুলা করতাম পিকনিকে যেতাম কতনা স্মৃতি আমাদের দুজনের মধ্যে বিরাজমান সে গুলো বলে শেষ করার নয়। তবে কিছু স্মৃতি শেয়ার করি ১৯৭১ সালের জানুয়ারী মাসে (পাকিস্হান আমলে) আমাদের দুই ভাইয়ের সুন্নতে খাৎনা এক সঙ্গে হয়েছিল। মাথায় পানির অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎতের বদলে হ্যাজাক জ্বালিয়ে বাড়ী আলোকিত করে অনুষ্ঠান হতো সেই অনুষ্ঠানে প্রচুর আনন্দ হয়েছিল আমাদের দুই ভাইকে আগতো মেহমান ও আত্মীয় স্বজনরা অনেক টাকা দিয়েছিল সেই টাকা গুলো মা’র কাছে জমা দিয়েছিলাম।
১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের কথা মনে পড়ে, বর্তমান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আমাদের নানা বাড়ী তার সাথে থাকা দলবল নিয়ে কিছু দিন পর পর যেতো বাড়ির সীমানায় কয়েকটি বড় বড় বাংকার (গর্ত) করে সেখানে অবস্থান করতো রণকৌশল ঠিক করতো আমরা দেখতাম অস্ত্র গুলাবারুদ গুলো নিয়ে চুল দাড়ি না কামানো মানুষ গুলোকে।
মা’-খালারা রান্না করে খাবার দিতেন আমার মামারা নিয়ে দিয়ে আসতো আমরা দুই ভাই তাদের সাথে যেতাম।
তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল আমাদের পরিবারের বিশাল বড় কোনো জমকালো অনুষ্ঠান এত বড় অনুষঠান আমাদের এলাকায় এর আগে কোনো বাড়ীতে হয়ছিলনা কতযে আমরা আনন্দ করেছিলাম সেগুলো বলে শেষ করা যাবেনা।
পর্যায়ক্রমে কর্মব্যাস্ত হয়ে পরি আমরা, কিন্তু দেখা সাক্ষাৎ নিয়মিত হতো।
আমি ১৯৮১ সালে শহীদ জিয়ার জানাজায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জরিত হই ওনি ব্যবসার দিকে মনোযোগী হয়ে পড়েন। আমার রাজনৈতিক জীবনে যখন-ই কোনো দূর্যোগের ঘনঘটা নেমে আসতো তখন-ই তিনি আমার পক্ষে ঝাপিয়ে পরতেন কি ভাবে আমাকে উদ্ধার করা যায়।
তৎকালীন জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মরহুম মনিরুজ্জামান বুলবুল ভাই একদিন আমাকে ডেকে বল্লেন আজকালতো সৎ দৃঢ় চেতা মানুষ পাওয়া যায়না আমি মনে মনে স্থীর করেছি ইসমাইল ভাইকে জেলা মৎস্যজীবী দলের আহবায়ক দায়িত্ব দেবো আমি কথা বলছি ওনি রাজি হয়নি তুমি কথা বলো, আমি ওনাকে বুঝিয়ে বলার পর একপর্যায়ে রাজি হলেন তার পর ওনি ওনার তৎপরতা শুরু করলে বুলবুল ভাই ওনার কর্মকান্ডে খুশী হয়ে আমাকে ডেকে বল্লেন না আশরাফ পাহেলী ভাইকে সভাপতি করে কমিটি প্রিন্ট করো তাই-ই করলাম বুলবুল ভাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে সুপারিশ করলেন যথারীতি ওনি সভাপতি হলেন
ওনি বেশ কিছু ইউনিট কমিটিও করেছিলেন।
আমি একদিন ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি দেখে মিঞা ভাই আমাকে বল্লেন তুই কই যাস আমি বল্লাম ঢাকা যাবো ওনি বল্লো যাওয়ার সময় আমার দোকান হয়ে যাস ঠিক আছে আমি যাওয়ার পথে ওনার দোকানে নেমে দেখা করলাম ওনি ড্রয়ার থেকে তখন মাত্র নতুন বের হওয়া একটি নকিয়া কোম্পানির মোবাইল সেটের প্যাকেট বেরকরে দিলেন আমি বল্লাম এটা কি ওনি বল্লেন তোর মোবাইলটা পুরান পুরান মনে হয় তখন আমার হাতে এরিকসন মোবাইল সেট ছিলো এইটা ব্যবহার কর আমি একটু অবাক হয়েই পরক্ষণে খুশি হয়ে গেলাম তার পর মোবাইলের দোকানে নিয়ে গিয়ে সিম কার্ড খুলে নতুন সেটে ফিট্ করে দিলো তখন মোবাইল সার্ভিসিং বের হয়নি এবংকি টাস মোবাইল ও বের হয়নি নকিয়া ঐ সেটটিই বাজারের সেরা সেট ছিল নতুন সেটটি নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পর যেদেখেছে সেই বলেছে বাহ্ এত সুন্দর সেট কবে কিনলেন না আমি কিনি নাই আমার বড় ভাই কিনে দিয়েছে সবাই প্রশংসা করেছিলো।
১/১১ সরকারের আমলে কিছু বিপথ গামী আর্মির অফিস্যার ও সৈনিকরা যখন বিনা কারণে কোনো রিপোর্ট বা কোনো প্রকার মামলা ছাড়াই আমাকে গ্রেফতার করার জন্য আমার বাসভবনে ডুকে আমাকে খোঁজা-খোঁজি করে পায়নি, তখন আমার বড় ভাই হাফেজ ইসমাইল সাহেবকে ধরে প্রচন্ড পিটিয়ে মাথায় বন্ধুক ঠেকিয়ে অযু করিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিলো, তখন আমার বাবা-মা এবং এলকার মানুষ দৌড়ে এসে ওনাদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে হত্যার হাত থেকে উদ্ধার করেছিল।
সেই থেকেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তারপর থেকেই ওনার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে যখন যেখানে চিকিৎসা করা দরকার তখন সেখানে নিয়েই চিকিৎসা করিয়েছি কোনো ভাবেই পুরোপুরি সুস্থ করতে পারিনি।
আহ্ মনে পড়ে সেই কথা গুলো মিঞা ভাই মাঝে মাঝে বলতেন আশরাফ ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) খবরকি তিনি কি মুক্ত হয়ে খোলা আকাশের নিচে লক্ষ কোটি জনতার উদ্দেশ্য ভাষণ দিবেননা তিনি কি এই শ্বাস রুদ্ধ কর অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য নেতৃত্ব দিবেননা।
তারেক সাহেব কি দেশে আসবেনা ? আমি বলতাম ম্যাডাম মুক্ত হবেন এবং আবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন। এবং তারেক রহমান সাহেব দেশে ফিরে দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন। আমার মুখ থেকে পজিটিভ কথা শুনে তিনি আনন্দিত হয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলতেন। না তিনি আর দেখে যেতে পারলেননা মুক্ত খালেদা জিয়া মুক্ত দেশের মানুষ তারেক রহমানকে নিজের দেশর মাটিতে।
গত ২৫/০২/২০২২ খ্রিঃ, তারিখ রোজ শুক্রবার যখন স্ট্রোক করলো তখন আমরা সবাই বাসায়-ই ছিলাম বাসা এবং পাড়া প্রতিবেশি নারী পুরুষ নির্বিশেষে কান্না জনিত অবস্থায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই নিয়ে যাওয়ার পর ছুটোছুটি করি
সেখানে জরুরি বিভাগের টলিতে নিথর দেহ পরে আছে বিশ্বাস করতে পারিনিযে মিঞা ভাই আর নাই তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ডাক্তার নার্সদের ঠেলে কাছে যাওয়ার সময় সামনে পেলাম ভাগিনা #হৃদয়কে ওকে আমি বললাম হৃদয় খবর বল হৃদয় কোনো কথা বলেনা ও এক পর্যায় বললো ডাক্তাররা চেষ্টা করতেছে, কিছুক্ষণ পর হৃদয় বলে মামা ই-সি-জি করবে তখন বুঝা যাবে রিপোর্ট কি আসে ই-সি-জি করার পর হৃদয় ইঙ্গিত করে আমাকে বুঝিয়ে বললো মামা রেজাল্ট জিরো তার মানে মামা আর নাই
আমি বিশ্বাস করিনা যে মিঞা ভাই মরে যাবে আমি যাকে সামনে পাই তাকেই বলি ভালো করে দেখেন ভাই আসলে কি হলো জরুরি বিভাগের বাহিরে আমার অন্য সব ভাই, বোন ও আত্মীয় স্বজনদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে, আমি মনে মনে বলি মিঞা ভাই মরে নাই সে আবার সবাইকে ডাকবে বলবে আমি বাসায় যাবো তোমারা আমাকে বাসায় নিয়ে চলো।
না তা আর হলোনা বাসায় নিয়ে আসলাম এ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁহার নিথর দেহটি।
বাড়ীতে কান্নার রোল কেও মেনে নিতে পারেনা তাঁহার মৃত্যু !
তাহার নিথর দেহটি যত্ন সহকারে ধোয়াইয়া সাদা কাফন পড়াইয়া আতর গোলাপ লাগাইয়া খাটিয়ায় তুলিয়া যখন জানাজার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হলো তখন যে কি আহাজারি মানুষের মধ্যে আবারও কান্নায় ভারী হয়েগেলো আকাশ বাতাস। জানাজায় প্রচুর মানুষের অংশ গ্রহন সেখানেও মানুষের কান্নার রোল কত মানুষযে তাকে ভালোবাসতো সেটা সেদিন তিনি প্রমাণ করেগেছেন বিএনপি’র সকল পর্যায়ের নেতা কর্মিগণ সেদিন শোক জানাতে এসেছিলেন এসেছিলেন জানাজাতেও।
শোক বর্তা দিয়েছিলেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকু – বাবু শ্যামল হোড় সহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল সহ অগনিত অসংখ্যিত ফেসবুক আইডিতে শোক জানিয়েছেন
অসংখ্য মানুষ ফোনের মাধ্যমে দেশ বিদেশ থেকে আমাকে এবং আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে শোক জানিয়েছেন মানতে পারিনা মিঞা ভাই’র এই অকাল মৃত্যু ! তবে এই সমবেদনা আমাকে শান্তনা দিলেও তাহার কথা মনে হলেই চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারিনা। আমাদের বাড়ীতে মা’ সহ অন্য সদস্যরা একটু পর পরই কান্নায় ভেঙে পরে কয়জনকে শান্তনা দেওয়া যায় আমি নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারিনা অন্যদের কেমনে শান্তনা দিবো। তিনি আর কোনো দিন ফিরে আসবেনা তবে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার হৃদয় থেকে এক মূহুর্তের জন্যে তাকে ভুলে থাকতে পারবোনা। এই রকম হিরার টুকরা ভাই ক’জনের কপালে জুটে জানিনা। কতযে মায়া ছিল তার মনের মনিকোঠায় সেটা বলে বুঝানো যাবেনা।
আজকাল দেখা যায় ভাইয়ে ভাইয়ে নানা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব আমাদের মধ্যে এরকম কিছু নেই আমাদের ভাই বোন একজন আরেকজনের কলিজার টুকরা আমাদের ভাই বোনের সন্তানদের মধ্যেও একই রকমের বন্ধন পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটা আল্লাহর অশেষ নিয়ামত বলা যেতে পারে।
আমরা ৯ ভাই ৩ বোন তিনি ছিলেন সবার বড় আজ ওনি নেই আমাদের মাঝে নেই এটা মানতে পারিনা, আল্লাহ্ জানেন কবে এই শোক সইতে পারবো। বাবার মৃত্যুটা ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে পারলেও মিঞা ভাই’র এই অকাল মৃত্যু মানতে পারিনা।
ওনি স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রেখে গেছেন আপনদের সকলের কাছে দোয়া চাই মহান রাব্বুল আল-আমিন যেনো ওনার কবরের আজাব মাফ করে ওনাকে জান্নাত বাসী করেন এবং ওনার স্ত্রী, সন্তানদের হেফাজত করেন।
-আমিন-
প্রথমকণ্ঠ / এম জাকির হোসেন